১লা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রাত ৯:৩১
শিরোনাম

বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিশ্চিত নয়: ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ

পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে যেহেতু কালোটাকা সাদা করার বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে, তাই এই সুযোগ থাকবে—এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

তিনি বলেন, ‘‘বাজেট প্রণয়নের সময় আমরা ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করেছি যাতে আলোচনা ও মতবিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। কালোটাকা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আমাদের সরকারের তো আর রাজনৈতিক দল বা সংগঠন নেই—নৈতিকতা ও জনসমর্থনই মূল ভিত্তি। তাই কালোটাকার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও, এটি চূড়ান্ত থাকবে এমন কথা বলা যায় না।’’

তবে তিনি এটাও বলেন, ‘‘যদি কালোটাকাকে বৈধ করার ব্যবস্থা রাখা হয়, তাহলে তা যেন সর্বোচ্চ কর হার এবং অতিরিক্ত ৫ শতাংশ জরিমানাসহ কার্যকর করা হয়। এভাবে শাস্তিমূলক কর নির্ধারণ করা হলে হয়তো বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।’’

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা বলেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট)

আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র‌্যাপিড চেয়ারম্যান এম. এ. রাজ্জাক ও নির্বাহী পরিচালক ড. এম. আবু ইউসুফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক।

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে অভিজ্ঞতা

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে রাজনৈতিক ঝোঁক থাকেই—সাদা, নীল কিংবা অন্য কিছু। আমি যখন উপাচার্য নিয়োগের জন্য তালিকা প্রস্তুত করছিলাম, তখন কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করেছিলাম—যেমন সাইটেশন সংখ্যা, সততা, দক্ষতা ও রাজনৈতিক অবস্থান। আওয়ামী লীগ–ঘেঁষা হওয়া চলবে না, তবে ‘নিষ্ক্রিয়’ বা ‘মৃদু’ বিএনপি হলে সমস্যা নেই। যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।’’

তিনি আরও জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা থাকার সময় বিএনপির মহাসচিব ও তার দীর্ঘদিনের বন্ধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তিনি বন্ধু হিসেবে কিছু সৎ ও যোগ্য ব্যক্তির নাম দেন যাদের শিক্ষা ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

ফখরুলের জবাবে তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে বিএনপির কেউই তো উঁচু পদে আসতে পারেনি, তাই কে সৎ আর কে দুর্নীতিগ্রস্ত তা বুঝব কীভাবে?” ড. মাহমুদ বলেন, “তার জবাবে আমি উপলব্ধি করেছি, সমস্যাটা সে নিজেও বোঝে, এবং বিএনপির পক্ষ থেকেও আমাকে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল।”

বিদায়ী সরকারের দায়িত্ব ও সামাজিক সুরক্ষা

ড. মাহমুদ আরও বলেন, ‘‘আমরা যখন দায়িত্ব ছাড়ব, তখন কে কী কাজ করেছে তার একটি সুস্পষ্ট তালিকা রেখে যেতে চাই—প্রচারণার জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য একটি রেফারেন্স হিসেবে।’’

আগামী বাজেটের সামাজিক সুরক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো এবং সামান্য ভাতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে—একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে যাতে করে অযোগ্য ও রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত ভুতুড়ে উপকারভোগীদের বাদ দেওয়া যায়। যদিও এটা চ্যালেঞ্জিং, তবুও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে।”