
সংগীতশিল্পী মাইনুল আহসান নোবেলের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আলোচনায় এসেছে তার কারাগারে বিয়ে। ঢাকার ইডেন কলেজের এক ছাত্রী কর্তৃক দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারের এক মাসের মধ্যেই কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে সেই মামলার বাদীকেই বিয়ে করেছেন গায়ক নোবেল।
গত ২০ মে ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ও জিম্মি করে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার হন নোবেল। মামলায় বলা হয়, অভিযুক্ত গায়ক দীর্ঘ সাত মাস ধরে ভুক্তভোগী নারীকে একটি বাসায় আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ করেন।
এরপর মামলার শুনানিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নাজমিন আক্তার নোবেলকে ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ে করার আদেশ দেন। সেই অনুসারে গত ১৯ জুন কারাগারেই সম্পন্ন হয় বিয়ে। দেনমোহর নির্ধারণ করা হয় ১০ লাখ টাকা। বিয়েতে কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাজমা হোসেন, সাবিহা তারিন, খলিলুর রহমান এবং সাদেক উল্লাহ ভূঁইয়া।
‘এটি ন্যায়বিচার নয়, বরং এক নিষ্ঠুর দৃষ্টান্ত’ — পারশা মাহজাবীন
এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন পূর্ণি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নোবেলের বিয়ের ছবি শেয়ার করে তিনি লেখেন,
“ধর্ষণের শিকার নারীকে তার ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের জন্য বাধ্য করা কখনোই ন্যায়বিচার হতে পারে না। এটি আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক নিষ্ঠুরতা এবং নৈতিক ব্যর্থতার নগ্ন চিত্র।”
পারশা আরও বলেন, “এ ধরনের রায় আমাদের বিচারব্যবস্থার গভীর পিতৃতান্ত্রিকতা ও কাঠামোগত দুর্বলতাকে তুলে ধরে। এখানে ন্যায়বিচারের চেয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয় সামাজিক রীতিনীতির মোড়কে ট্রমা ঢেকে রাখার প্রতি।”
তার ভাষায়, “এই রায় শুধু একজন নারীকে অপমান নয়, বরং দেশের প্রতিটি ধর্ষণ বা নির্যাতনের শিকার নারীর জন্য একটি ভয়ানক বার্তা—যেখানে সহিংসতার সঙ্গে আপস করাই যেন বিচার।”
বিতর্কের মুখে আইন ও সমাজ
নোবেলের বিয়েকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ একে বিচারের বিকল্প রূপ হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে নারী অধিকারকর্মীরা একে ভয়ঙ্কর নজির হিসেবে দেখছেন—যেখানে অপরাধের চেয়ে সম্পর্কের বৈধতা প্রতিষ্ঠাই গুরুত্ব পাচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তিতে বিয়ে কখনোই গ্রহণযোগ্য সমাধান হতে পারে না। এটি ভুক্তভোগীর প্রতি আরেক দফা অবিচার।